জি.আর.ই পরীক্ষা

জি.আর.ই পরীক্ষা: তিনমাসে যেভাবে প্রস্তুত করবেন নিজেকে-

বিজ্ঞান অনুষদ থেকে ব্যাচেলর কোর্স শেষ করে যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে চান, তাদেরকে অবশ্যই জি.আর.ই পরীক্ষা দিতে হয়। জি.আর.ই পরীক্ষাকে বলা যায় আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ভর্তি পরীক্ষা– যেখানে মূলত ভার্বাল, কোয়ান্টিটেটিভ এবং এনালিটিকাল রাইটিং এই তিনটি অংশ থাকে।

গণিত কিংবা ইংরেজিতে দক্ষতা

জি.আর.ইতে আপনার গণিত কিংবা ইংরেজিতে লেখার দক্ষতা যাচাই করা হয় না; এই পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত আপনার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। উচ্চশিক্ষা পুরাপুরি গবেষণা নির্ভর। এই গবেষণার কাজে ভালো করতে হলে প্রতিনিয়ত আপনাকে নিত্য নতুন বিষয়, তথ্য-উপাত্ত ইত্যাদি অনেক কিছু খুব সতর্কতার সাথে বিশ্লেষণ করতে হয়। তাই বিশ্লেষণ করার দক্ষতাকে একজন ভালো গবেষকের অন্যতম একটি গুণ হিসেবে দেখা হয়। এই বিশ্লেষণ ক্ষমতার ভিত্তিতে কাউকে যাচাই করার জন্যই মূলত জি.আর.ই পরীক্ষা নেওয়া।

পরীক্ষার খুঁটিনাটি

জি.আর.ই পরীক্ষা মূলত তিনটি ভাগে নেওয়া হয়ে থাকে। ১) এনালিটিক্যাল রাইটিং; ২) ভার্বাল এবং ৩) কোয়ান্টিটেটিভ। এনালিটিকাল রাইটিংয়ের সময় ১ ঘণ্টা। এই সময়ে আপনাকে Issue এবং Argumentative এই দুই ধরনের রচনা লিখতে হবে। প্রতি সেকশনে বরাদ্দ থাকবে ত্রিশ মিনিট করে সময়।

এনালিটিকাল রাইটিংয়ের নাম্বার দেওয়া হয় ১ থেকে ৬ স্কেলে। যদি ইংরেজিতে লেখার দক্ষতা এবং আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতা ভালো হয় তাহলে রাইটিংয়ে অনায়াসে ৩.৫ – ৪ পাওয়া সম্ভব। ভার্বাল এবং কোয়ান্টিটেটিভের নাম্বার বরাদ্দ থাকে ১৭০ করে সর্বমোট ৩৪০ এবং প্রতিটি ভাগে দুই সেট করে প্রশ্ন আসে। ভার্বালে দুই সেকশনে ২০টি করে সর্বমোট ৪০টি প্রশ্ন দেওয়া হয় এবং তার জন্য থাকে এক ঘণ্টা সময়। অন্যদিকে কোয়ান্টিটেটিভে একই সংখ্যক প্রশ্নের জন্য ৩৫ মিনিট করে সর্বমোট ৭০ মিনিট দেওয়া হয়।

এছাড়া অতিরিক্ত সেট হিসেবে ভার্বাল কিংবা কোয়ান্টিটেটিভ থেকে আপনার জন্য প্রশ্ন দেওয়া হতে পারে– যেটার জন্য কোনো স্কোরিং হয় না। যেহেতু আপনি জানেন না কোন সেকশনে স্কোরিং করা হয় না, তাই আপনাকে প্রতিটি সেকশনই খুব ভালোভাবে দিতে হবে।

কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনে ভার্বালের তুলনায় ভালো করা অনেক সহজ– অংকের গাঁথুনি ভালো থাকলে ন্যূনতম প্রস্তুতি নিয়েও কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনে ১৬০+ সহজে পাওয়া যায়। কিন্তু ভার্বাল সেকশনে ১৫০ পেতেও বেশ লম্বা সময় ধরে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া লাগে। মূলত এই তিন সেকশনেই আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতাকে যাচাই করা হয়। এবং যার দক্ষতা যত ভালো তিনি এই পরীক্ষায় সাধারণত তত ভাল করে থাকেন।

পরীক্ষা প্রস্তুতির সময়কাল

জি.আর.ই পরীক্ষার প্রস্তুতির কোনো নির্দিষ্ট সময়কাল নেই– কেউ তিন সপ্তাহ প্রস্তুতি নিয়ে খুব ভালো করে আবার কেউ তিন কিংবা ছয় মাস পড়েও খুব একটা ভালো স্কোর করতে পারে না। হয়তো আপনি ইউটিউবে দেখলেন কোনো আইআইটি গ্র্যাজুয়েট একটা ভিডিও শেয়ার করেছেন যেখানে তিনি বলছেন তিনি কীভাবে এক মাসের প্রস্তুতি নিয়েই জিআরইতে ৩২০+ স্কোর পেয়েছেন। সেটি দেখে আপনিও একমাসে প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে দেখলেন যে আপনার স্কোর ৩০০-ও হয়তো হয়নি।

অথচ আইআইটির যে ছাত্রটি এক মাসের প্রস্তুতি নিয়েই জিআরইতে ৩২০+ স্কোর পেয়েছে, সে আসলে তার আইআইটি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবেই জিআরই সমমানের সমস্যার সমাধান করেছে। কিংবা একমাস পড়েই যে ভার্বালে ১৫৫+ পেয়েছে সে আসলে অনেক আগে থেকেই জিআরইর ভোকাবুলারি জানতো। হয়তো তার ইংরেজিতে সাহিত্য এবং সায়েন্টিফিক আর্টিকেল পড়ার অভ্যাস ছিল। যারা একদম গোঁড়া থেকে প্রস্তুতি শুরু করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভার্বালের প্রস্তুতিতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। যেমন জিআরইর স্ট্যান্ডার্ডের ১০০০-১৫০০ শব্দের অর্থ ও ব্যবহারের উপর ভালো দখল আনতেই লেগে যাবে দুই থেকে তিন মাস। সেই দুই-তিন মাসে কোয়ান্ট এর জন্য প্রস্তুত হওয়া গেলেও দেখা যাবে ভার্বালের প্রস্তুতি ভালো হয়নি। তার জন্য অতিরিক্ত আরো দুই মাস সময় লাগছে। তাই আপনার অবস্থা বুঝেই আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কয় মাস ধরে প্রস্তুতি নেবেন। যদি জিআরই ওয়ার্ড লিস্টের পুরোটাই আপনার কাছে অজানা থেকে থাকে তাহলে আপনার উচিত ছয় মাস ধরে প্রস্তুতি নেওয়া। আর আপনি যদি দেখেন, নাহ, ইংরেজিতে আপনার দখল ভালো তাহলে খুব ভালোভাবে তিন মাস প্রস্তুতি নিলেই জিআরইতে খুব ভালো করা সম্ভব।

জি.আর.ই পরীক্ষা

প্রস্তুতি সহায়িকা

জিআরই পরীক্ষার প্রস্তুতির কোনো নির্দিষ্ট বই নেই। বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর বই পাওয়া যায়। তার মধ্যে ব্যারনস, ম্যানহাটান, ইটিএস এর অফিসিয়াল জিআরই বই। নোভা ম্যাথ বাইবেল, কাপলানের বইগুলোর চাহিদা ব্যাপক। বই ছাড়াও কিছু ওয়েবসাইট আছে যারা আপনাকে জিআরইর প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে। যেমন, magoosh, cruncprep, prepscholar এ ধরনের ওয়েব সাইটে জিআরই প্রস্তুতি সহায়ক ভিডিও এবং প্রশ্নের ভাণ্ডার থাকে। আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে একটা ছয় মাস কিংবা এক বছর মেয়াদি একাউন্ট কিনতে হবে সাইটের সব রিসোর্স ব্যবহার করার জন্য। আপনি চাইলে যেকোনো বই কিংবা যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে সাবস্ক্রিপশন কিনে প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। বেশিরভাগ মানুষ যে ধরনের বই, সফটওয়্যার কিংবা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে তা নিম্নরূপ, ETS Official GRE Guide, 2nd EditionManhattan 5 lb. Book of GRE Practice ProblemsNova Math BibleMagoosh GRE PrepBarron’s 333 High-Frequency WordsManhattan 500 Essential WordsManhattan 500 Advanced WordsETS Powerprep SoftwareManhattan GRE online practice tests

জিআরই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য উল্লিখিত বই, সফটওয়ার এবং অনলাইন সাবস্ক্রিপশন একান্ত অপরিহার্য। তবে আপনার প্রস্তুতি যদি ছয় মাসব্যাপী হয় সেক্ষেত্রে আপনি নিম্নোক্ত উৎসগুলোও দেখতে পারেন।

Princeton 1014 Questions for NEW GREBarron’s GRE WorkbookPowerscore GMAT Critical Reasoning Bible তবে মোদ্দা কথা হলো, আপনি যদি জিআরই’র প্রস্তুতি সহায়িকামূলক সব বইও শেষ করে ফেলেন, তার মানে এই না আপনার পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন পড়বে। আপনার কাজ হলো, যেকোনো সমস্যায় অতি সহজে সমাধান করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা– এজন্য ভার্বাল এবং কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের বিভিন্ন টপিকের উপর আপনার দখল ভালো হওয়া চাই।

জি আর ই প্রস্তুতি: প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহবেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা জিআরই প্রস্তুতি শুরু করেন তারা সাধারণত ওয়ার্ড লিস্ট মুখস্থ করতে বসে যান। এটা অবশ্যই ভুল পদ্ধতি। নতুন শব্দ শেখা কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ এবং একঘেয়ে কাজ। তাই প্রথম সপ্তাহে শুধু শব্দ শেখার দিকে মনোযোগ দিলে দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিনটি শুরু হওয়া উচিত একটি পূর্ণাঙ্গ জিআরই টেস্ট দেওয়ার মাধ্যমে। যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে বসুন এবং কোনো বই থেকে একটি ফুল লেন্থ টেস্ট নির্বাচন করে সেগুলোর সমাধান করতে বসে যান।

যেহেতু প্রথম দিন আপনি কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই টেস্ট দিতে বসছেন সেক্ষেত্রে আপনি নির্ধারিত সময়ের আড়াই গুণ সময় নিয়ে পরীক্ষাটি শেষ করুন এবং ভার্বালের সহায়িকা হিসেবে ডিকশনারি নিয়ে বসুন যেন আপনি অপরিচিত শব্দগুলোর অর্থ দেখে নিতে পারেন। পরীক্ষাটি দেওয়া শেষ হলে এবার নিজেকে যাচাই করতে বসুন।

প্রথমে শুরু করুন কোয়ান্টিটেটিভ দিয়ে। জিআরইর এই সেকশনে সব ধরনের সম্ভাব্য টপিক থেকে এক বা একাধিক প্রশ্ন করা হয়। যেসব টপিকের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, কিংবা পরীক্ষা দেয়ার সময় মনে হয়েছে আপনি প্রশ্নের কিছুই বুঝছেন না সেসব টপিক চিহ্নিত করে রাখুন।

এবার ভার্বাল নিয়ে বসুন। যদি এমন হয়, মূল পরীক্ষার সব প্রশ্নের ৬০-৭০% শব্দের অর্থই আপনি জানেন না সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ভোকাবুলারি শেখার জন্য বেশি সময় দিতে হবে। ডিকশনারি থেকে অর্থ দেখার পরও আপনার কী ভার্বালের বিভিন্ন প্রশ্নের অর্থ বুঝতে সমস্যা হয়েছিল। যদি তা হয় তাহলে আপনার রিডিংয়ের দক্ষতা বাড়াতে হবে। এই পরীক্ষাটি দিয়ে আপনাকে বের করতে হবে আপনার দুর্বলতাগুলো। এরপর সে অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

এবার প্রস্তুতির পালা শুরু। জিআরই প্রস্তুতির জন্য আপনি যদি Magoosh এর প্রিমিয়াম একাউন্ট কিনে থাকেন তাহলে আপনার টার্গেট হবে প্রথম সপ্তাহে আপনি কোয়ান্টিটেটিভের সব ভিডিও এবং দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝে ভার্বালের সব ভিডিও দেখা শেষ করবেন। কোয়ান্ট সেকশনে যে ধরনের টপিক থেকে সমস্যা আসে তার সবগুলোই এসএসসি এবং এইচএসসি স্তরের গণিতে পড়া হয়ে যায়। তাই নতুন করে বেশি কিছু শেখার থাকে না।

তবে কোয়ান্টের প্রস্তুতির মূল দিকটা হলো গাণিতিক সমস্যা সমূহের সমাধান করার পদ্ধতি– যা সাধারণত প্রচলিত নিয়ম থেকে ভিন্ন হয়। বিভিন্ন শর্টকাট পদ্ধতি শেখার প্রতি জোর বেশি দেওয়া উচিত। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হলো– ভার্বালে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশ্ন পড়ে তা বুঝতে বেশি সময় লাগা, রিডিং কম্প্রিহিনশন বুঝতে না পারা ইত্যাদি। তাই ভার্বাল প্রস্তুতির সময় রিডিংয়ের দক্ষতা বাড়ানোর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া উচিত।

আপনি যদি Magoosh এর একাউন্ট না কিনে থাকেন সেক্ষেত্রে চাইলে আপনি ETS এর অফিসিয়াল গাইড বই দিয়ে শুরু করতে পারেন। মজার কথা হলো জিআরইর সব বইয়ের ই পিডিএফ কপি অনলাইনে বিনামূল্যেই পাওয়া যায়। তাই নীলক্ষেত থেকে ফটোকপি প্রিন্ট এর বই না আনলেও চালাতে পারবেন।

ETS এর বইয়ের ভার্বাল এবং ম্যাথ সেকশনের সব সমস্যা ভালোভাবে শেষ করতে হলে আপনার দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। পাশাপাশি প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন ১৫টি করে নতুন শব্দ শিখুন। জিআরইর হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়ার্ড লিস্ট দিয়ে শুরু করতে পারেন। পাশাপাশি প্রতিদিন ভার্বালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে যেসব শব্দ নতুন পাবেন সেগুলোর একটি তালিকা করুন।

তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহপ্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে আপনার যদি Magoosh এর সব ভিডিও দেখা শেষ না হয়ে থাকে কিংবা আপনি যদি ETS এর বই শেষ করতে না পারেন তাহলে এই দুই সপ্তাহের মাঝে আপনাকে অবশ্যই তা শেষ করে ফেলতে হবে। যদি Magoosh এর সাবস্ক্রিপশন কেনা থাকে তাহলে তাদের ডেটাবেসের সব প্রবলেম সলভ করা শুরু করে দিন। আর যদি তা না থাকে, তাহলে Manhattan 5 lb. GRE বই থেকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা শুরু করতে পারেন।

প্রস্তুতির শুরুর দিকে ETS এর অফিসিয়াল গাইড শেষ করার পর আপনি যে বই কিংবা অনলাইন ডেটাবেসের সমস্যার সমাধানগুলো করবেন তার সবগুলো সমস্যা সময় নিয়ে সমাধান করবেন। প্রথম মাসে আপনার জোর দেওয়া উচিত কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের উপর। কাজেই এক্ষেত্রে আপনার সময়ের ৭০ ভাগ আপনি কোয়ান্টের জন্য আর বাকি ৩০ ভাগ ভার্বালের জন্য রাখতে পারেন। তবে যেভাবেই সময় বরাদ্দ করুন না কেন, প্রথম মাসের মধ্যে অবশ্যই ম্যাথের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি আপনাকে শেষ করতে হবে।

আর ভার্বাল সেকশনে আপনার প্রথম একমাসে প্রতিদিন ১৫টি করে হলে ন্যূনতম ৪৫০টি নতুন শব্দ শেখা উচিত। আর সেই সাথে ভার্বালের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে যেসব নতুন শব্দ পেয়েছেন তার একটি তালিকা তো আপনার কাছে আছেই। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি এক্সেলে একটি ফাইল মেইন্টেইন করেন। নতুন শব্দের তালিকা করার পাশাপাশি সেগুলোর অর্থ, প্রতিশব্দ এবং বিপরীত শব্দগুলো পারলে লিখে রাখুন, প্রস্তুতিতে কাজে দেবে।

প্রস্তুতির দ্বিতীয় মাস- ভার্বালদ্বিতীয় মাসে আপনার ভার্বাল সেকশনের প্রস্তুতির উপর বেশি জোর দেওয়া উচিত। জিআরইতে ম্যাথ সেকশনে ভালো করার পাশাপাশি আপনাকে ভার্বালেও ভালো করতে হবে। আপনি ম্যাথে ১৬০+ স্কোর তুললেন কিন্তু কোনো কারণে দেখা গেল আপনার ভার্বালের স্কোর ১৪০ও পার হয়নি, সেক্ষেত্রে ভালো ভালো স্কুলে আপনার এডমিশন এবং ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। জিআরইর ভার্বাল সেকশনেও আপনার রিজনিং স্কিল যাচাই করা হয়, এবং এটা কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্বিতীয় মাসে ভার্বালের প্রস্তুতির জন্য পুরাপুরি সময় দেওয়া উচিত। এই মাসে আপনার লক্ষ্য হবে দুটি– ন্যূনতম ১০০০ – ১৫০০ জিআরই শব্দের অর্থ ব্যবহার সহ জানা এবং প্রতিদিন ন্যূনতম ভার্বালের দুই সেট করে প্রশ্ন সমাধান করা। আর সেই সাথে ভার্বালের প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক সমস্যার সমাধান করা।

ভার্বালে মূলত দুই ধরনের প্রশ্ন আসে– শূন্যস্থান পূরণ এবং রিডিং কম্প্রিহিনশন। সাধারণত শূন্যস্থান পূরণ দুই একটি একক ব্ল্যাংক, ২-৩ টি ডাবল ব্ল্যাংক এবং ১-২ টি ট্রিপল ব্ল্যাংক এর প্রশ্ন আসে। আর সেনটেন্স ইক্যুইভেলেন্স থেকে দুই সেকশনে সর্বোচ্চ ৯টি প্রশ্ন আসে। সেখানে শূন্যস্থান থাকে দুটি এবং উত্তরগুলো হয় একে অপরের সমার্থক শব্দ। ভার্বালের এ ধরনের প্রশ্নের সবগুলোই সঠিক উত্তর দেওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ হয় যদি কেউ খুব ভালো করে চর্চা করে থাকেন। তাই এ ধরনের প্রশ্ন বেশি বেশি করে চর্চা করা উচিত।

রিডিং কম্প্রিহিনশনের প্রশ্নগুলো একটু কঠিন– ছোট, বড় এবং মাঝারি সাইজের প্যাসেজ অনুযায়ী প্রশ্নগুলোকে ভাগ করা যায় এইভাবে-

১-২ টি লং প্যাসেজ (সাধারণত ৪০ লাইনের উপরে হয়ে থাকে) – সর্বোচ্চ চারটি প্রশ্ন।৫-৬ টি শর্ট প্যাসেজ (সাধারণত ২০ লাইনের উপরে হয়ে থাকে) – সর্বোচ্চ এক থেকে দুটি প্রশ্ন।২-৩ টি মিডিয়াম প্যাসেজ (সাধারণত ২০ থেকে ৪০ লাইনের হয়ে থাকে) – সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনটি প্রশ্ন।৩-৮ টি ক্রিটিকাল রিজনিং প্রশ্ন (শর্ট প্যারাগ্রাফ)।

রিডিং কম্প্রিহিনশনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সর্বপ্রথম পুরা প্যাসেজটি পড়ে বুঝতে হয় এবং এরপর প্রশ্ন পড়ে বুঝে তারপর সম্ভাব্য উত্তর প্যাসেজ থেকে খুঁজে বের করতে হয়। এজন্য দেখা যায় রিডিং কম্প্রিহিনশনের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে বেশ ভালো সময় লাগে। তাই টেক্সট কমপ্লিশনের প্রশ্ন যদি কম সময়ে সমাধান করা যায়, তাহলে রিডিং কম্প্রিহিনশনে সময় বেশি দেওয়া যায়। রিডিং কম্প্রিহিনশনের জন্য সবচেয়ে ভালো ডেটাবেস হলো জিআরই বিগ বুকের ডেটাবেস। জিআরই বিগ বুক যদিও জিআরই পুরাতন ফরম্যাটের জন্য ডিজাইন করা, কিন্তু রিডিং কম্প্রিহিনশনের সমস্যা সমাধান এর জন্য এটা ভালো একটা সহায়ক বই। তাছাড়া Manhattan 5 lb. GRE, Barron’s GRE এর প্রশ্নসমূহ খুব ভালোভাবে সমাধান করতে পারেন।

দ্বিতীয় মাস যেহেতু ভার্বালের প্রস্তুতির জন্য বরাদ্দ থাকবে, তাই চেষ্টা করবেন যত বেশি পারা যায় ভার্বালের প্রশ্ন সমাধান করার। জিআরই পরীক্ষাতে আপনি কখনো প্রশ্ন কমন পাবেন না, কিন্তু এ ধরনের পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলোর একধরনের প্যাটার্ন থাকে। তাই যখনই কোনো প্রশ্ন সমাধান করবেন সবার আগে চেষ্টা করুন তার প্যাটার্ন বুঝতে এবং সে ধরনের প্যাটার্নের প্রশ্নসমূহ কীভাবে সমাধান করতে হয় তা ভালোভাবে শিখুন।

প্রথম মাসে যদি আপনি কোয়ান্টিটেটিভের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নেন, তাহলে দ্বিতীয় মাসে আপনার আসলে কোয়ান্টের জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু নেই। তবে এই মাসে আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিদিন কোয়ান্টের ২০ থেকে ৩০টি করে সমস্যার সমাধান করতে। যেকোনো বই কিংবা অনলাইন ফোরাম এমনকি ফেসবুকেই অনেক জিআরই পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক পেজ আছে। সেখানে প্রতিদিন কেউ না কেউ কোনো না কোনো সমস্যা এবং তা কীভাবে সমাধান করতে তা জানতে চেয়ে পোস্ট দেয়। সেসব সমস্যার সমাধান করুন। আপনি যদি প্রতিদিন ৩০টি করে কোয়ান্টের সমস্যার সমাধান করতে পারেন তাহলে শুধু দ্বিতীয় মাসে আপনি সর্বমোট ৯০০টি ম্যাথ এর প্রশ্ন সমাধান করবেন।

প্রস্তুতির শেষ মাসআর মাত্র এক মাস পরই আপনার জিআরই পরীক্ষা। প্রথম মাসে আপনার প্রস্তুতি ছিল ম্যাথ ফোকাসড এবং দ্বিতীয় মাসে ভার্বাল ফোকাসড, আর প্রতিদিন ১৫ টি করে শব্দ শিখে থাকলে আপনার সর্বমোট শেখা শব্দ সংখ্যা প্রায় ১০০০। এবার তৃতীয় মাসের শুরুতে Powerprep 2.0 থেকে একটি মক টেস্ট দিয়ে দিন। এই মক টেস্টের স্কোর দেখে আপনি ঠিক করবেন তৃতীয় মাসে আপনার প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত। আপনার ম্যাথের স্কোর যদি ১৬০+ এবং ভার্বালের স্কোর যদি ১৪৫+ থাকে তাহলে আপনার প্রস্তুতি অনেকটাই ভালো। এখন শুধু আপনাকে ফোকাস করতে হবে আপনি কোয়ান্ট সেকশনের কোন কোন টপিকে বারবার ভুল করছেন সেগুলোতে।

যারা সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্টুডেন্ট তাদের আসলে ম্যাথের প্রতি জোর বেশি দেওয়া উচিত। ম্যাথে ১৬৫+ স্কোর পেলে আপনি অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনায়াসে ঢুকে যেতে পারবেন। ভার্বালে আসলে ইম্প্রুভমেন্ট হওয়াটা বেশ সময়ের ব্যাপার, তবে ১৪৫-১৫০ এর মাঝে স্কোর থাকলেও কাজ হয়ে যাবে। যদি আপনি মনে করেন আপনি ভার্বালে আরো ভাল স্কোর চান যেমন ১৫৫+ সেক্ষেত্রে আপনি আরো দুই মাস অতিরিক্ত সময় নিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারেন, আর তা না চাইলে তিন মাসের প্রস্তুতিই যথেষ্ট।

তবে তৃতীয় মাস থেকে নিয়মিত Analytical Writing প্র্যাকটিস করুন। জিআরইর যেকোনো বইয়ে আপনি রাইটিংয়ের স্যাম্পল এবং কী ধরনের প্রশ্ন আসে সেগুলোর নমুনা পাবেন। আপনার ইংরেজির দক্ষতা যদি ভালো থাকে এবং আপনার লেখার মান যদি মোটামুটি হয় তাহলে অনায়াসে রাইটিংয়ে ৩ পাওয়া যায়। তবে রাইটিংয়ে ৪ স্কোর পেতে হলে যথেষ্ট চর্চা করতে হবে। (পরে কোনো একসময় এনালিটিকাল রাইটিং নিয়ে আলোচনা করা হবে।)

তৃতীয় মাসের মাঝামাঝি এসে Powerprep 2.0 এর দ্বিতীয় পরীক্ষাটি দিন এবং আপনার স্কোর কত আসে তা দেখে শেষ ১০-১৫ দিন আপনার কী করা উচিত তা ঠিক করুন। Powerprep এর স্কোর আপনাকে ধারণা দেয় চূড়ান্ত পরীক্ষায় আপনার কত আসতে পারে, তবে সাধারণত ৩-৫ স্কোর কমবেশি হয়ে থাকে, অর্থাৎ আপনি যদি মক টেস্টে ৩১০ পান তাহলে মূল পরীক্ষায় আপনি ৩০৫-৩১৫ এই রেঞ্জের মধ্য স্কোর করবেন।

শেষ দুই সপ্তাহে আসলে খুব বেশি কিছু দেখার দরকার নেই। ওয়ার্ড লিস্ট রিভিশন দেওয়া, ম্যাথের ফর্মুলাগুলো দেখা আর টুকটাক প্রশ্ন প্র্যাকটিস করা। জিআরই এমন একটি পরীক্ষা যার প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক কোনো বই নেই। তাই শেষের দিকে সবসময় এসে মনে হবে আপনি চাইলে আরো একটু ভালো প্রস্তুতি নিতে পারতেন। তাই শেষ সময়ে এসে নতুন কোনো রিসোর্স দেখার চেষ্টা না করাই ভালো। অনেক প্রকাশক কিংবা অনলাইন সাইট আছে যারা নিজেদের ভিজিটর কিংবা ইউজার বাড়ানোর জন্য জিআরই এর স্ট্যান্ডার্ডের বাইরে গিয়ে অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্ন ডিজাইন করে। শেষ সময়ে এসব প্রশ্ন দেখলে আপনার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে। কাজেই শেষ দুই সপ্তাহে নতুন কোনো কিছুই পড়া উচিত নয়।

সবশেষে এই হলো, তিন মাসের প্রস্তুতির একটা আনুমানিক নির্দেশিকা। তবে তিন মাস কিংবা ছয় মাস কোনো স্ট্যান্ডার্ড সময় কাল না, ব্যক্তিভেদে কারো জিআরই প্রস্তুতির জন্য এক মাস লাগতে পারে আবার কেউ কেউ ছয় থেকে আট মাস পড়েও পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারেন না। মনে রাখবেন, আপনার আত্মবিশ্বাসই আপনাকে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে সাহায্য করবে– কাজেই এমনভাবে প্রস্তুতি নিন যাতে আপনি পরীক্ষার দিন আত্মবিশ্বাসের সাথে ঠাণ্ডা মাথায় ভালোভাবে পরীক্ষাটি দিতে পারেন।

Helpline:

+8801615000129, 01615000128, 01615000131

Email:

info@sangen.com | bdsangenedultd@gmail.com